Reptiles Farm Ltd.

Reptiles Farm Ltd.
crocodilefarmer@gmail.com

Wednesday, 30 March 2011

ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের নানা উদ্ভাবনা

হারুনুর রশিদ চৌধুরী
হবিগঞ্জের ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছে বাতাসের সাহায্যে বিদ্যুত্ উত্পাদন, আধুনিক পদ্ধতিতে পাটের আঁশ পৃথকীকরণের যন্ত্র, ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পাওয়ার পদ্ধতি, ভয়ঙ্কর প্রাণী কুমির চাষ করে বাণিজ্যিকভাবে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের কলাকৌশলসহ নানা কিছু। সমপ্রতি হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজে অনুষ্ঠিত ৩১তম জাতীয় বিজ্ঞান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সপ্তাহ ২০১০-এ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এসব আবিষ্কার করে।
আধুনিক পদ্ধতিতে পাটের আঁশ পৃথকীকরণের যন্ত্র : পাট বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রতিবছর পাট চাষের আয় থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভিত শক্তিশালী হচ্ছে। আধুনিক পদ্ধতিতে পাটের আঁশ পৃথকীকরণের একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেছে হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারি কলেজের বিজ্ঞান একাদশ শ্রেণীর ছাত্র ইমতিয়াজ শিপন। মাত্র ৫শ’ টাকা খরচ করে যেকোনো কৃষক সহজেই এ যন্ত্র তৈরি করতে পারবেন। যন্ত্রটির নাম দেয়া হয়েছে ‘আধুনিক উপায়ে পাটের আঁশ পৃথকীকরণ যন্ত্র’। এ যন্ত্র তৈরি করতে হলে প্রথমে ১টি কাঠের লম্বা টুকরা তৈরি করতে হবে। এরপর কাঠের দুই প্রান্তে ৪টি চাকা লাগাতে হবে। তার ওপরে ২টি রডের নল ও ২টি বক্স দিয়ে সহজেই তৈরি করা যায় এ আধুনিক যন্ত্রটি। এ যন্ত্রটি ব্যবহার করলে অতি সহজে ও স্বল্প সময়েই একজন কৃষক পাটের আঁশ পৃথক করতে পারবেন। পাশাপাশি কৃষকের সময় ও খরচ হ্রাস পাবে। বর্তমানে এক একর পাটের আঁশ তুলতে একজন কৃষকের ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগে কিন্তু এ যন্ত্রটি ব্যবহার করলে একজন কৃষক এক সপ্তাহের মধ্যে এক একর জায়গার পাটের আঁশ তুলতে পারবেন। এছাড়া পাটের একটি কাঠি থেকে আঁশজাতকরণ করতে সময় লাগে ৫ মিনিট, কিন্তু এ যন্ত্রের সাহায্যে কৃষকরা মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই কাঠি থেকে পাটের আঁশ তুলতে পারবেন।
পাট পৃথকীকরণ যন্ত্রের উদ্ভাবক ইমতিয়াজ শিপন জানান, বর্তমানে কৃষকরা আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছেন। পাটজাতকরণের এ যন্ত্র ব্যবহার করলে খুব সহজে ও অল্প সময়ে তারা পাটজাতকরণ করতে পারবেন এবং অধিক মুনাফা অর্জন করতে পারবেন।
ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পাওয়ার পদ্ধতি : হবিগঞ্জ বিকেজিসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা আবিষ্কার করেছে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পাওয়ার পদ্ধতি। তাদের মতে, ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পাওয়ার পদ্ধতি সবার জানা থাকা প্রয়োজন। ভূমিকম্প সাধারণত মধ্যস্তর থেকে আসে। ভূমিকম্প থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য একটি পিতলের তৈরি ঘণ্টা বাড়িতে বেঁধে দিতে হবে। ৬০ কিলোমিটার গভীরে একটি নল স্থাপন করতে হবে। সেই নলে একটি পাইপ বসাতে হবে। পাইপের মাথায় একটি ঘণ্টা বেঁধে দিতে হবে। এ ঘণ্টা দিলে ভূমিকম্প হওয়ার ৫ মিনিট আগে ঘণ্টাটি বেজে উঠবে এবং তখনই ঘরের লোকজন সতর্ক হবে এবং ঘরের এককোণে দাঁড়িয়ে থাকবে। বাড়িতে ঘণ্টা বেঁধে দেয়ার কারণ—ভূমিকম্পের ফলে মাটিতে কম্পন সৃষ্টি হয়। কম্পনের ফলে পাইপটা নড়বে। পাইপের মাথায় বেঁধে দেয়া ঘণ্টা বেজে ওঠবে এবং লোকজন বুঝতে পারবে ভূমিকম্প আসছে। ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পাওয়া বাড়ি তৈরি করতে মোট টাকার প্রয়োজন ১ লাখ ৫০ হাজার। বিজ্ঞানমেলায় এ প্রকল্পটি প্রদর্শন করে বিকেজিসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী শক্তি, পূজা, ইলু, সুসমি, সুমু, সৃষ্টি, আঁখি ও এলিমুর।
কুমির চাষ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের কলাকৌশল : কুমির একটি ভয়ঙ্কর প্রাণী হলেও কুমির চাষ করে বাণিজ্যিকভাবে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এমনি একটি প্রকল্প তৈরি করেছে বৃন্দাবন সরকারি কলেজের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ৬ শিক্ষার্থী। এরা হলেন রুহুল দাশ মিথুন, আবদুল হান্নান, হেলাল মিয়া, ফারহানা আক্তর, আছমা আক্তার ও আহমদ। তারা এ প্রকল্পের মাধ্যমে কুমির চাষের ব্যাপক সফলতার কথা তুলে ধরেছেন। বর্তমানে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে কুমির চাষের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। একটি কুমির চাষ প্রকল্প তৈরি করতে হলে প্রথম ১৫ একর জায়গা সংগ্রহ করতে হবে। এর মধ্যে ১০ একর জায়গার ওপর একটি পুকুর। পাশে একটি হ্যাচারি ও একটি তথ্য কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। সমগ্র এলাকার চতুর্দিকে বড় রাউন্ড থাকবে। প্রথমে কুমিরের বাচ্চা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেমন চীন, ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়া থেকে সংগ্রহ করতে হবে। প্রতিটি বাচ্চার মূল্য ৭শ’ ডলার ধরা হয়। এক সঙ্গে প্রায় ৭০টি কুমির চাষ করা সম্ভব। কুমিরের বাচ্চা সংগ্রহ করে হ্যাচারিতে ৫ শতাংশ পটাসিয়াম ফরমোলেট দিয়ে গোসল করানোর পর জীবাণুমুক্ত করে ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা তাদের পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। এরপর পুকুরে লবণ মিশিয়ে নোনাপানি তৈরি করে চাষাবাদের উপযুক্ত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, নোনাপানি না হলে কুমির চাষ সম্ভব নয়। কুমির চাষের সময় ১২ থেকে ১৫ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শ্রমিক সার্বক্ষণিক তাদের দেখাশোনা করতে হয় এবং খাবার সরবরাহ করতে হয়। শুরু হয় পূর্ণাঙ্গ চাষাবাদ। প্রতি বছরে একটি কুমির এক ফুট করে বৃদ্ধি পায়। ৩ বছর পর কুমির বাণিজ্যিকভাবে রফতানি করা সম্ভব। ৩ বছর পর একটি কুমির ৩০ থেকে ৩৫ কেজি ওজনের হয়। যার মূল্য প্রতি কেজি ২শ’ ডলার। একটি কুমিরের মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৭ হাজার ডলার। অর্থাত্ শুরুতে একটি কুমির আমদানি করতে হয় মাত্র ৭শ’ ডলার দিয়ে। চাষাবাদের পর সেটি বিদেশে রফতানি করা হয় ৭ হাজার ডলারে।
এছাড়া কুমির প্রকল্প দেখতে আসা দর্শনার্থীর জন্য টিকিটের ব্যবস্থা রয়েছে। একটি প্রকল্পে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী কুমির দেখতে ছুটে আসেন। দর্শনার্থীর টিকিটের অংশ থেকে লাখ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। দর্শনার্থীদের জন্য পুকুরের পাড়ে একটি তথ্য কেন্দ্র চালুর ব্যবস্থা থাকবে। সেখানে কুমির ও প্রকল্প সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য একজন দর্শনার্থী সহজেই পেতে পারবেন। কুমির একটি মাংসাশী প্রাণী। কুমিরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও চামড়া বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়।
কুমিরের দাঁত দিয়ে উন্নতমানের নেকলেস তৈরি করে বিভিন্ন দেশে রফতানি করা সম্ভব। চামড়া দিয়ে উন্নতমানের মানিব্যাগ, লেদারসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া যায়। হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজে কুমির চাষ প্রকল্পটি ছিল দর্শকদের মধ্যে আকর্ষণীয়। এ প্রকল্প উদ্ভাবনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, কুমির প্রকল্প বেকারত্ব দূরীকরণে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে। তারা সিলেট অঞ্চলের প্রবাসীদের কুমির চাষ প্রকল্প গ্রহণের জন্য আহ্বান জানান।
বাতাস থেকে বিদ্যুত্ উত্পাদন : তেল কিংবা পেট্রল ছাড়া বাতাস থেকে বিদ্যুত্ উত্পাদনের পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে বার্ডস কেজি স্কুলের ছাত্র। বাতাসে পাখা ঘুরলে তা থেকে অন্য একটি জেনারেটরের সাহায্যে তৈরি হবে বিদ্যুত্। সেই বিদ্যুত্ দিয়ে চালানো যাবে ফ্যান ও জ্বালানো যাবে বাতি। ছোট আকারের একটি জেনারেটরের সাহায্যে নির্ধিদ্বায় তৈরি করা যাবে ২০০ থেকে ২৫০ ওয়াট বিদ্যুত্।
৪ ফেব্রয়ারি দুপুরে হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারি কলেজে ৩১তম জাতীয় বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সপ্তাহের উদ্বোধন করেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এনামূল হক মোস্তফা শহীদ। তিন দিনব্যাপী মেলায় ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১শ’টি প্রদর্শনী অংশ নেয়। মেলায় উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সুভাষ চন্দ্র দেবের ধানের ছত্রাকজনিত রোগ এবং সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা, জেকে এন্ড এইচকে হাইস্কুলের গিনহাউস অ্যাফেক্ট প্রদর্শনীগুলো যুগোপযোগী ও আকর্ষণীয় হিসেবে দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে।

No comments: