নিয়ামুল কবীর সজল, ময়মনসিংহঅবশেষে ময়মনসিংহের ভালুকার কুমির রপ্তানি শুরু হয়েছে। গত ৪ জুন বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো খামারে উৎপাদিত কুমির বিদেশে রপ্তানি করা হয়। ময়মনসিংহের ভালুকায় অবস্থিত রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড দেশের এবং আন্তর্জাতিক আইন মেনে এই প্রথম ৬৭টি হিমায়িত কুমির জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রপ্তানি করেছে। আগামী ডিসেম্বরে ছোট-বড় মিলিয়ে আরো প্রায় চার শ হিমায়িত কুমির বিদেশে রপ্তানি করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে। গত মার্চে ভালুকা থেকে কুমির রপ্তানির সব কিছু ঠিকঠাক থাকলেও প্রশাসনিক কিছু নিয়মের কারণে কুমির রপ্তানি প্রায় দুই মাস বিলম্বিত হয়।
রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড প্রকল্পের অবস্থান ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে শালবনের ভেতরে উথুরা ইউনিয়নের হাতিবেড় গ্রামে। কুমির প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয় ২০০৪ সালে। ওই বছরের ২২ ডিসেম্বর মালয়েশিয়া থেকে প্রায় সোয়া কোটি টাকা ব্যয়ে ৭৫টি কুমির আনা হয়। এর মধ্যে পুরুষ কুমির ছিল ১৩টি। আনার পরদিনই এগুলো বিশেষভাবে তৈরি পুকুরে ছেড়ে দেওয়া হয়। শুরুতে প্রকল্পের সাফল্য নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে সংশয় ও দুশ্চিন্তা ছিল। প্রথম দুশ্চিন্তা ছিল ডিম পাড়া নিয়ে। পরের দুশ্চিন্তা ছিল ডিম ফোটা ও বাচ্চা বড় হওয়া নিয়ে। ২০০৬ সালের আগস্টে প্রথমে দুটি কুমির ডিম দেয়। প্রথম প্রজনন বছরে ডিম ও বাচ্চার সংখ্যা কম হলেও ক্রমান্বয়ে এ সংখ্যা বাড়তে থাকে। ২০০৭ সালেও এখানের কুমিরের সংখ্যা ছিল ২০৭টি। ৬৭টি রপ্তানির পর বর্তমানে এখানে ছোট-বড় সাড়ে ৭০০ কুমির আছে। প্রকল্পে দিন দিন কুমিরের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। এবারের বর্ষা মৌসুমেও কুমির ডিম দেওয়া শুরু করেছে। গত ৩ জুন একটি কুমির ৫৪টি ডিম দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় এবং সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্যাংকিং সহায়তায় এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। এ ছাড়া এবার কুমির রপ্তানিকালে হিমায়িত কুমির প্যাকিংসহ সংশ্লিষ্ট কাজে সহযোগিতা করেছে ঢাকার এনাম এন্টারপ্রাইজ। রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুশতাক আহম্মেদ বলেন, কুমির চাষ খুবই লাভজনক একটি প্রকল্প। কুমিরের কোনো কিছুই ফেল না নয়। এর চামড়া, মাংস, হাড়, দাঁত_সবই চড়া মূল্যে বিক্রি হয়। ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, স্পেনসহ বিভিন্ন দেশ এখান থেকে কুমির নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে কুমির রপ্তানির সংখ্যা বাড়তেই থাকবে, যা দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
No comments:
Post a Comment