Reptiles Farm Ltd.

Reptiles Farm Ltd.
crocodilefarmer@gmail.com

Wednesday, 30 March 2011

বিশ্বায়নের প্রবাহে রপ্তানির পণ্য বহুমুখীকরণ আবশ্যক

বিশ্বায়নের প্রবাহে রপ্তানির পণ্য বহুমুখীকরণ আবশ্যক
যে কথা না বললেই নয়
আনু মাহমুদ
চলতি অর্থবছরের আট মাস পার হয়ে গেছে। এখন অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের প্রবণতাগুলোর একটা হিসাবনিকাশ হচ্ছে। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো-অর্থবছরের প্রথমার্ধে গার্মেন্টসসহ দেশের সব খাতের রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সময়ে ৬.২ শতাংশ মাইনাস বা ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যা ৭.৭২ মার্কিন ডলারের সমান।
গার্মেন্টস রপ্তানি হয়েছে ৫.৫৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, আগের বছরের একই সময়ে (জুলাই-ডিসেম্বর) তুলনায় ৭.৫ শতাংশ ঋণাত্মক। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, ডিসেম্বরেই ৮৮৫ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ১২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বিজিএমইএ সভাপতি বলেছেন, মন্দা কাটতে শুরু করায় গত দুই-তিন মাসে আমদানিকারকদের তাগিদ বাড়তে শুরু করেছে। অথচ স্থানীয় প্রস্তুতকারকরা ভুগছেন মারাত্মক জ্বালানি সঙ্কটে। মন্দায় দুর্বল হয়ে পড়া রপ্তানিকারকদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকারের হেলাফেলার প্রতিও ইঙ্গিত করেছেন। তিনি এ-ও বলেছেন, গত ডিসেম্বরে রপ্তানি আয়ের যে রিপোর্ট তা রপ্তানি শিল্প পরিস্থিতি সম্পর্কে সরকারের দৃষ্টি অবশ্যই উন্মোচিত করতে পারে। ডিসেম্বরের রপ্তানি আয়ের অঙ্ক হতাশাজনক বলে উল্লেখ করে বিকেএমইএ সভাপতি বলেছেন, স্থানীয় রপ্তানিকারকরা ক্রমাগত প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাচ্ছেন। প্রতিযোগী অন্যান্য দেশে অবকাঠামো সুবিধা ও সরকারি প্রণোদনার কারণে আমদানিকারকদের অধিকতর ডিসকাউন্ট দিতে পারছে। ডিসেম্বরে গার্মেন্টস শিপমেন্ট হ্রাস পাওয়াতেই রপ্তানি পরিস্থিতি নেতিবাচক হয়ে পড়েছে।
রপ্তানি খাতে এরকম নেতিবাচক প্রবণতা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। বাংলাদেশের অর্থনীতির বড় সহায়ক তৈরি পোশাক রপ্তানি খাতের আয়। অন্যটি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স অর্থাৎ জনশক্তি রপ্তানি খাত। বিরাজমান রপ্তানি ধরে রাখতে হবে। এটাই প্রথম কথা এবং অপরিহার্য কথা। পরবর্তী কথা হলো, রপ্তানি আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রচলিত খাতগুলোর সামর্থ্য বাড়াতে হবে এবং অপ্রচলিত খাতের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। সেই সঙ্গে উভয় খাতের জন্য বিরাজমান বাজারের বাইরেও নতুন বাজার অনুসন্ধান করতে হবে। দেশের অর্থনীতির স্বার্থে এই কাজে সংগঠকের ভূমিকা পালন করতে হবে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাগুলোকে। দেশীয় উৎপাদক ও রপ্তানি কারকদের উদ্দীপ্ত ও সামর্থ্যবান করে তোলার লক্ষ্যে বাস্তবোচিত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ছাড়া এটা সম্ভব নয়। তারও আগে জ্বালানিসহ সার্বিক অবকাঠামো সুবিধা সমপ্রসারণের পদক্ষেপ নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নয়ন ঘটাতে হবে। রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে দেশকে অবশ্যই মুক্ত রাখতে হবে। কেননা দেখা গেছে, অর্থনৈতিক মন্দা উৎপাদন ব্যবস্থায় যতটা বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে, তার চেয়ে অর্থনীতিকে কম প্রভাবিত করে না রাজনৈতিক অস্থিরতা। শুধু উৎপাদন নয়, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান_সবই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশের অতীত অভিজ্ঞতায় এর যথেষ্ট দৃষ্টান্ত রয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের বৈঠকে দাতা প্রতিনিধিরা জনপ্রশাসনের সংস্কার এবং জাতীয় সংসদকে অর্থবহ করে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, প্রধান দুই দলের বাড়াবাড়ি গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তারা দুর্নীতি দমনে ধীরগতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এ জন্য সরকারের সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রমের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ খাতের ব্যবস্থাপনা দক্ষতা, বিকল্প জ্বালানি ব্যবস্থা, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন তারা। বিদ্যুৎ জ্বালানির মূল্য সমন্বয়ের কথা বলার পাশাপাশি তারা পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে বিশেষ করে এডিবি, বিশ্বব্যাংক ও আইডিবি বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
উন্নয়ন ফোরামে দাতারা স্বাভাবিকভাবেই তাদের দৃষ্টিকোণকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। তারপরও মাঝে মধ্যেই দেখা যায়, বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের বক্তব্যে বাহির্বিশ্বের দৃষ্টিকোণটিও প্রতিফলিত হয়। এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শিক্ষণীয় হিসেবে গ্রহণের কিছু বিষয় থাকে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করে গণতন্ত্রকে কার্যকর করা, জ্বালানিসহ সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়নে দুর্নীতি নিরসন করার মতো বিষয়গুলো প্রাধান্য না দেয়ার অর্থ হবে পিছিয়ে যাওয়া। এসব ক্ষেত্রে হুমকি-ধমকি দিয়ে নয়, বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে সব বিষয়ের নিরপেক্ষ বিবেচনা এবং তার নিরিখে উপর্যুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণই অপরিহার্য। সর্বপোরি উৎপাদন, রপ্তানি তথা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকারের সহায়তা শুধু নামে নয় বরং বাস্তবে সক্রিয় করতে হবে। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য, চীন ও ভারতের মতো দেশগুলোতে শুরুতে বিশ্বমন্দার ব্যাপক আঘাত এসেছে। অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এসব দেশের অর্থনীতি। তারপরও যথাসময়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করায়, তারা ইতোমধ্যে অনেক এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশে বিশ্বমন্দা যে তেমন আঘাত করেনি, এটা মোটামুটি সব মহল থেকেই বলা হয়েছে। অর্থনীতিবিদদের পক্ষ থেকে এমন বলা হয়েছিল যে, মন্দাকালীন পরিস্থিতির সুযোগ গ্রহণ করে বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার সমপ্রসারণ সক্ষম হতে পারে। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে দেখা গেল, চলতি অর্থবছরে প্রথমার্ধে রপ্তানি আয় হ্রাস পেয়েছে। এই বাস্তবতাকে সামনে রেখে সরকারকে যেমন সত্যিকার অর্থে প্রণোদনাদায়ক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, তেমনি উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদেরও সতর্ক উদ্যোগ ও সযত্ন প্রয়াস চালিয়ে যেতে পারে।

সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত 'অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানির তালিকায় কুমির' শীর্ষক প্রতিবেদনটি দৃষ্টি আকর্ষণ করার দাবি রাখে। খাল কেটে কুমির আনা প্রবচনটি দেশে পরিচিত। কিন্তু কুমির চাষ বা কুমিরের খামার করেও যে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব, এটা অনেকেরই অজানা। কুমির বাণিজ্যের সম্ভাবনাকে নিশ্চিত করেছেন ময়মনসিংহের ভালুকায় দেশের একমাত্র কুমির খামারের উদ্যোক্তা কতিপয় দূরদৃষ্টিসম্পন্ন তরুণ। ২০০৪ সালে রেপটাইলস নামের একটি বাণিজ্যিক কুমির খামার গড়ে তুলে মালয়েশিয়া হতে প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয় করে আমদানি করেন ৬০টি স্ত্রী ও ১৫টি পুরুষসহ ৭৫টি কুমির। খামারের ১৫ একর জমির মধ্যে প্রায় ৫ একর জমির ২০০ হাজার বর্গফুট পুকুর এলাকায় ছেড়ে দেয়া হয় এ সব আমদানি করা কুমিরকে। প্রতি বছর প্রজনন বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে এ খামারে কুমিরের বাচ্চা লালন পালন করা হচ্ছে ৮০৫টি। ইতোমধ্যে রপ্তানিযোগ্য হয়েছে শতাধিক কুমিরের বাচ্চা। এ সব কুমিরের বাচ্চা রপ্তানি করে প্রায় ৫ মিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব হবে বলে জানা গেছে। এইভাবে কুমির চাষ করে ২০২১ সাল নাগাদ শুধু কুমির রপ্তানি খাতে একশ' মিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশের রপ্তানি খাত বলতে সাধারণত তৈরি পোশাক শিল্প, হিমায়িত খাদ্য, চা, চামড়া ইত্যাদি কয়েকটি প্রধান পণ্যের ওপরে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মনোযোগ নিবদ্ধ। কিন্তু এসব প্রধান রপ্তানি পণ্যের বাজার আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাসহ নানা কারণেই পিছিয়ে পড়ার হুমকির মধ্যে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে রপ্তানি বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে প্রচলিত পণ্যের সম্ভাবনাকে খতিয়ে দেখাটা জরুরি। যেমন, কুমিরের রপ্তানি সম্ভাবনা প্রসঙ্গে সংশিষ্টরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কুমিরের প্রক্রিয়াজাত মাংস, চামড়া, হাড় কোন কিছুই ফেলনা নয়। বিশ্ববাজারের এই চাহিদা মেটাতে চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভারত, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশে বাণিজ্যিকভাবে কুমিরের চাষ হচ্ছে। একটি সূত্র মতে, ২০০৯ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ হতে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় ৫০ হাজার কুমিরের হাত বদল হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে কুমিরের খামার ও কুমির রপ্তানির উদ্যোগ মোটেও অবাস্তব মনে হয় না। তবে বেসরকারি এই উদ্যোগের সাফল্য নির্ভর করবে সরকারের রপ্তানি নীতি ও বন বিভাগের সহযোগিতার ওপর। দেশে প্রধান রপ্তানি পণ্য হিসেবে যেসব পণ্য বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে, তার একটি সিস্টেম বা পদ্ধতি গড়ে উঠেছে। ত্রুটি ও প্রতিবন্ধকতা বিদ্যমান থাকলেও উদ্যোক্তারা পরিচিত পণ্যের ক্ষেত্র সরকারি সাহায্য সহযোগিতা ও সহজে পেয়ে থাকেন। কিন্তু যেসব উদ্যোক্তা নতুন বাজার সৃষ্টির জন্য প্রয়াসী, তাদের ব্যাপারে সরকার অধিক যত্নশীল না হলে দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি ঘটবে না।
দেশে ভেষজ উদ্ভিদ চিরতা চাষ ও রপ্তানির সম্ভাবনা নিয়েও কিছুদিন আগে পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। টুপি, ফুল, ফুলের ঝাড়ু, শিকা, নকশিকাঁথা, শতরঞ্চি হতে শুরু করে শুঁটকি মাছের অাঁশ-বহু অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানি করেও রপ্তানি আয় বাড়ানো সম্ভব প্রমাণিত হয়েছে। খোঁজ করলে দেখা যাবে, উন্নত বিশ্বের কলকারখানায় জোগান দেয়ার মতো বহু কাঁচামালের উৎপাদন ও জোগান দেয়া বাংলাদেশের পক্ষে উদ্যোগ নিলেই সম্ভব। দেশে শিল্পকারখানা গড়ে যে সব পণ্যকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারছে না, সেইসব পণ্য রপ্তানি করে আমরা অর্জন করতে পারি বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। বহির্বিশ্বে লাখ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশী দেশের অপ্রচলিত বহু পণ্যের রপ্তানি সম্ভাবনাকেও জোরদার করেছে।
বাংলাদেশে আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের মধ্যে ভারসাম্য আনতে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ ও ভলিউম বৃদ্ধির বিকল্প নেই। এর জন্য বহির্বিশ্বে রপ্তানি বাজার খুঁজতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। শুধু সরকারের ওপর নির্ভর করে থাকলে রপ্তানির বাজার সমপ্রসারিত হবে না। তবে অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানিতে উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতা দেয়ার বিষয়টি সরকারকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে।

প্রকারান্তরে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, গত অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি এ আট মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের আট মাস অর্থাৎ জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অর্জিত রপ্তানি আয় ৩.২১ শতাংশ কমে গেছে। আর লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এ আয় কম হয়েছে ১১.২৯ শতাংশ। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রপ্তানি আয় সামগ্রিকভাবে কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, সামগ্রিকভাবে রপ্তানি আয় কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও নিট পোশাক এবং ওভেন গার্মেন্টসের মতো প্রধান রপ্তানি খাতসমূহের আয় কমে গেছে। অন্যদিকে প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা অর্থাৎ রেমিটেন্সও তুলনামূলকভাবে হ্রাস পেয়েছে। যেসব খাতে রপ্তানি আয় কমেছে সেগুলো হলো, কাঁচা তরকারি, ক্যামেরা যন্ত্রাংশ, নিট পোশাক, ওভেন গার্মেন্টস, টেক্সটাইল ফেব্রিক্স, চা, হিমায়িত খাদ্য এবং সিরামিক সামগ্রী। পক্ষান্তরে যেসব খাতে রপ্তানি আয় বেড়েছে সেগুলো হলো_ কাঁচা পাট, পাটজাত দ্রব্য, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, পেট্রোলিয়াম বাই প্রোডাক্ট, কারিগরি পণ্য, টেরিটাওয়েল, তামাকজাত পণ্য, ওষুধ প্রভৃতি। এগুলোর মধ্যে তামাকজাত পণ্য বাদ দিলে অন্যান্য পণ্যে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি সর্বনিম্ন ৪১ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ৮১ শতাংশ। এ পরিসংখ্যান থেকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বেরিয়ে আসে। সেগুলো হলো, এতদিন ধরে যেগুলো ট্র্যাডিশনাল আইটেম বা প্রচলিত পণ্য হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে সেগুলোর রপ্তানি কমতে শুরু করেছে। পক্ষান্তরে যেসব পণ্য নন-ট্র্যাডিশনাল আইটেম বা অপ্রচলিত পণ্য হিসেবে পরিগণিত হয়েছে সেগুলোর রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরও দেখা যাচ্ছে, আমাদের রপ্তানি তথা রপ্তানি আয়ের একটি নতুন প্যাটার্ন ধীরে ধীরে বিকশিত হচ্ছে। এ প্যাটার্ন দেখে আগামী দিনে আমাদের রপ্তানি স্ট্র্যাটেজি নিয়ে নতুন করে ভাবনা-চিন্তা করার প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি।
বাংলাদেশের অর্থনীতিকে যারা কিছুটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন তারা জানেন, গার্মেন্টস সেক্টর ছাড়া শিল্পের কোন উল্লেখযোগ্য বিকাশ ঘটেনি। এখন আমাদের অর্থনীতির প্রধান দুটি স্তম্ভ হলো রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প এবং জনশক্তি রপ্তানি। আর এ দুটি খাত থেকে বাংলাদেশ বছরে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ২ হাজার কোটি ডলার আয় করছে। কিন্তু এ দুটি প্রধান খাতে অতি সমপ্রতি যে নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, সেটা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের অর্থনীতি মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে। এখন পর্যন্ত রপ্তানি ক্ষেত্রে বিকল্প বাজার বা বিকল্প পণ্য উল্লেখযোগ্যভাবে উদ্ভাবিত হয়নি। উভয় ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের জন্য এক্সপোর্ট ডেস্টিনেশন বা রপ্তানির চূড়ান্ত গন্তব্য হলো আমেরিকা এবং ইউরোপের বাজার। অথচ পৃথিবীর বৃহত্তম মহাদেশ এশিয়া, আরও দুটি মহাদেশ-আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকা এবং পূর্ব প্রান্তে অস্ট্রেলিয়ার বাজার তেমন গুরুত্বের সঙ্গে অনুসন্ধান করা হয়েছে বলে জানা যায়নি। অনুরূপভাবে তৈরি পোশাক শিল্প ছাড়া আর কোন কোন পণ্য আমেরিকা ও ইউরোপ ছাড়া এশিয়া, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও লাতিন আমেরিকার বাজার পেতে পারে সে ব্যাপারেও কোন সিরিয়াস স্টাডি করা হয়েছে বলে জানা যায়নি। শুরুতেই যেসব পরিসংখ্যান দেয়া হয়েছে সেখানে দেখা যাচ্ছে পাট এবং পাটজাত দ্রব্য যেগুলো সেদিনও ছিল অতীতের স্মৃতি, সেগুলো আবার সোনালী যুগে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনায় উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। এ দুটি পণ্য ছাড়া অপ্রচলিত পণ্যের বাজার কীভাবে বহুমুখী হতে পারে সে ব্যাপারেও এখন থেকেই গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করা দরকার। রপ্তানির বাজার এবং রপ্তানি পণ্যকে বহুমুখী করার জন্য অবিলম্বে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোকে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশের প্রায় সব বৈদেশিক দূতাবাসে রয়েছে একটি বাণিজ্যিক শাখা। দূতাবাসমূহের এসব বাণিজ্যক শাখার বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তা এবং উদাসীনতার অভিযোগ অনেক পুরনো। এ অভিযোগ থেকে আজও তারা মুক্ত হতে পেরেছে বলে মনে হয় না। অথচ এসব ট্রেড এটাশে, ট্রেড কমিশনার বা ট্রেড মিনিস্টার এবং তার অধীনস্তদের কাজই হলো সেই দেশে বাংলাদেশের কোন কোন পণ্য বাজার পেতে পারে এবং প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে তাদের কোন কোন পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে সে সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া। এখন তারা প্রচলিত পণ্যের ক্ষেত্রে বাজার বহুমুখী করার চেষ্টা করবে এবং যেসব দেশে তারা কর্মরত আছেন সেসব দেশে অপ্রচলিত কোন কোন পণ্য বাজার পেতে পারে সেগুলোও গুরুত্বের সঙ্গে অনুসন্ধান করবেন বলে জনগণের প্রত্যাশা। এ কথা সত্য, সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের রপ্তানি রেটিংস ভাল। কিন্তু সেটিকে কীভাবে টেকসই করা যায় সে বিষয়টিও তাদেরকে গভীরভাবে ভাবতে হবে।
এ সব সমস্যার আগে রয়েছে আরও বড় সমস্যা। তা হলো প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ এবং অব্যাহত বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান। শুধুমাত্র রপ্তানি খাতের কথাই বলব কেন, এখন তো সময়ের আবর্তনে এটি দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, বিদ্যুৎ এবং অবকাঠামোর অভাবে কোন বিদেশী বিনিয়োগ এদেশে বলতে গেলে আসছে না। একই কারণে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগের ক্ষেত্রেরও স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে। গার্মেন্টসের প্রধান দুটি খাত ওভেন ও ওনট সেক্টরের প্রধানরাও গত দু-তিন দিন আগ স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ না পেলে তারা তাদের রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারবেন না। কেউ কেউ অবশ্য তাদের রপ্তানি মার্কেট ধরে রাখার জন্য জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এর ফলে উৎপাদন খরচ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাচ্ছে। এখন তারাও বলছেন, এভাবে উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে তারা রপ্তানির বাজারে টিকে থাকতে পারবেন না। কারণ এর ফলে প্রতিযোগিতার বাজারে তারা পিছিয়ে পড়ছেন। সবশেষে একটি কথা। বহুল প্রচলিত একটি কথা হলো : 'হয় রপ্তানি করো, না হয় ধ্বংস হও'। জাতীয় উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে রপ্তানির যে বিকল্প নেই, এ কথা থেকে মূলত তাই বুঝানো হয়েছে। কাজেই রপ্তানি বাড়াতেই হবে এবং এ জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ ও অবকাঠামো নির্মাণকে অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।

No comments: