Reptiles Farm Ltd.

Reptiles Farm Ltd.
crocodilefarmer@gmail.com

Wednesday, 30 March 2011

ভালুকার খামার থেকে ১০০ কোটি টাকার কুমির যাচ্ছে জার্মানিতে

ভালুকার খামার থেকে ১০০ কোটি টাকার কুমির যাচ্ছে জার্মানিতে
undefined
আলতাব হোসেন
বাংলাদেশ থেকে কুমির রফতানি শুরু হচ্ছে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জার্মানির কাছে প্রায় ১০০ কোটি টাকার কুমির রফতানি করবে দেশের একমাত্র বাণিজ্যিক কুমির চাষ প্রকল্প রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড। প্রথম ধাপে ৭০ থেকে ১০০টির মতো কুমির রফতানি হবে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ কুমির রফতানিকারক দেশের তালিকায় প্রথমবারের মতো নাম লেখাবে। ১০ ডিসেম্বর এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার। সার্ক দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র বাণিজ্যিক কুমির চাষের এ খামারটি ময়মনসিংহের ভালুকায় অবস্থিত।
এশিয়ার মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে কুমির চাষ বাংলাদেশেই প্রথম শুরু হয়। উদ্যোক্তারা আশা করছেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এটি হবে বিশ্বে কুমিরের সবচেয়ে বড় খামার। বর্তমানে কুমির চাষের সর্ববৃহৎ খামারটি রয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, ২০১৪ সাল নাগাদ প্রতি বছর চার হাজার কুমির রফতানি করে তিন থেকে চার মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে। এরই মধ্যে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশ থেকে কুমির আমদানির প্রস্তাব দিয়েছে। বিশ্বে পাঁচশ' থেকে ছয়শ' মিলিয়ন ডলারের কুমিরের মাংসের বাজার রয়েছে। গত বছর বিশ্ববাজারে প্রায় ৪০ হাজার কুমিরের চামড়া কেনাবেচা হয়েছে। চীন, তাইওয়ান, জাপান, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কুমিরের মাংসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, পাপুয়া নিউগিনি,
ইন্দোনেশিয়া, চীনসহ প্রায় অর্ধশত দেশে বাণিজ্যিকভাবে কুমিরের চাষ হচ্ছে।
ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার হাতিবেড় গ্রামে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড ২০০৪ সালে এ খামার প্রতিষ্ঠা করে। এ খামারে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিনিয়োগ রয়েছে। শুরুতে কুমিরের সংখ্যা ছিল ৭৫টি। পরে এসব কুমিরের ডিম থেকে কৃত্রিম উপায়ে বাচ্চা ফোটানো হয়। বর্তমানে এ খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে কুমির আছে ৮শ'টির বেশি। আগামী বছর আরও একশ'টি স্ত্রী কুমির আমদানি করবে খামার কর্তৃপক্ষ। এ খামারে মূলত লোনা পানির কুমিরই চাষ করা হয়। বিশ্বে লোনা পানির কুমিরের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে থাইল্যান্ড বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লোনা পানির কুমিরের চামড়া, মাংস ও হাড়ের জোগান দিচ্ছে। বিশ্বে সাত প্রজাতির কুমিরের চাষ করা হয়। এর মধ্যে লোনা পানির কুমিরই হচ্ছে সেরা।
বাংলাদেশ পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ২০০৪ সালের ৫ মে এ খামার প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়। উদ্যোক্তারা পরে আন্তর্জাতিক সংস্থা 'সিআইটিইএস'-এর অনুমোদন নিয়ে মালয়েশিয়ার সারওয়াত থেকে সোয়া কোটি টাকা ব্যয়ে ৭৫টি কুমির আমদানি করে। ২০০৪ সালের ২২ ডিসেম্বর কুমিরগুলো খামারে ছাড়া হয়। তখন আমদানি করা কুমিরগুলোর বয়স ছিল গড়ে ১০ থেকে ১৪ বছর। কুমিরগুলো ৭ ফুট থেকে সর্বোচ্চ ১২ ফুট লম্বা ছিল। বিশেষজ্ঞরা জানান, কুমিরের গড় আয়ু ১০০ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। আমদানি করা কুমিরের মধ্যে ১৫টি ছিল পুরুষ। খামারের কুমিরকে খাবার হিসেবে মাছ ও মাংস দেওয়া হয়।
রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুশতাক আহম্মেদ জানান, গত জুলাই মাসে জার্মানির সঙ্গে কুমির রফতানির চুক্তি হয়। তারপর ৩১ আগস্ট প্রধান বন সংরক্ষকের কাছে কুমির রফতানির অনুমতি চাওয়া হয়। কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্তহীনতায় তা বিলম্বিত হয়। এতে করে কুমির উৎপাদন খরচ বেড়েছে। ভবিষ্যতে তিনি এ ধরনের ক্ষেত্রে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি জানান। তিনি জানান, আগামী মাসে ইউরোপের কয়েকটি দেশে আরও দেড় থেকে দুইশ' কুমির রফতানির প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
রেপটাইলস ফার্ম সূত্রে জানা গেছে, ভালুকার হাতিবেড় গ্রামে প্রায় ১৩ একর জমির মধ্যে ৪ একর জমির মাটি কেটে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ৩২টি পুকুর তৈরি করা হয়েছে। পুকুরগুলোর তলদেশ পাকা এবং তিন ফুট ইটের ওপর ৩ ফুট কাঁটাতারের বেষ্টনী রয়েছে। কুমির যাতে স্বাভাবিকভাবে নিখাদ প্রাকৃতিক পরিবেশে থেকে জীবনযাপন করতে পারে সেজন্য খামারে ৪০ প্রজাতির প্রায় ছয় হাজার ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছ রোপণ করা হয়েছে। লাগানো হয়েছে ছোট প্রজাতির কৃত্রিম ঘাস। এর মধ্য দিয়ে খামারটিতে গড়ে তোলা হয়েছে নিবিড় অনুকূল এক প্রাকৃতিক পরিবেশ।

No comments: